চাঁপাই সংবাদ রিপোর্ট 🔳
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬টি মেহগনির পর এবার রাতের অন্ধকারে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে লিচু থাকা গাছ কেটে ফেলেছে দূর্বৃত্তরা।
গত বুধবার ৪ মে রাতে সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মুনসেফপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পূর্ব শত্রুতার জেরে মুনসেফপুর গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে মো. মনিরুল ইসলামের দুইটি লিচু গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এনিয়ে শুক্রবার ৬ মে রাতে সদর মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন মনিরুল ইসলাম (৬৫)।
স্থানীয় বাসিন্দা, ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাতের অন্ধকারে এসে ৫-৭ বছর বয়সী দুটি লিচু গাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। অপরিপক্ক গুটি জাতের লিচু থাকা অবস্থায় গাছ দুটি কেটে ফেলা হয়েছে। পরে এনিয়ে প্রতিবেশী ৩ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করেছেন লিচু গাছ ও জমির মালিক মনিরুল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, গত মঙ্গলবার দুটি বড় লিচু গাছ কাটার দুই মাস আগেও ১৬টি মেহগনির গাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সকালে এসে ছোট বাচ্চার মতো ডুকরে ডুকরে লিচু গাছের এখানে এসে কেঁদেছেন মালিক মনিরুল ইসলাম। তিঁল তিঁল করে তিনি গড়ে তুলেছিলেন গাছগুলো। তার সাথে অন্য কারো ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতেই পারে। তাই বলে ফলসহ গাছ কেটে ফেলে দেয়া কেমন মানসিকতা?
জমি ও লিচু গাছের মালিক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। কিন্তু তাই বলে গাছে থাকা অপরিপক্ক লিচুর গাছ কেটে ফেলতে হবে কেন? লিচুসহ গাছ কাটার কারনে আমি যে পরিমাণ কষ্ট পেয়েছি, ফল না থাকলে তা পেতাম না। চারা লাগানোর পর থেকে তিঁল তিঁল করে গড়ে তোলা লিচু গাছগুলোকে এভাবে নির্দয়ভাবে কেটে ফেলার বিচার চাই। আল্লাহ তাদেরকে কোনদিন ক্ষমা করবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার পৈত্রিক জমি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করতে চাই নিজ বংশের আত্নীয় মৃত ফরজন আলীর ছেলে মো. সাইদুর (৫৫)। গত দুই মাস আগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার একদিন পর রাতের অন্ধকারে মুনসেফপুর মৌজার আরএস ১০ ও ১১ নম্বর দাগের জমিতে থাকা ১৬টি মেহগনির গাছ কেটে ফেলা হয়। মেহগনির গাছ কেটেই ক্ষান্ত না হয়ে পুনরায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আবার দুটি লিচুর গাছ কেটে ফেলেছে।
মনিরুল ইসলাম আরও জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে গাছ কাটার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাদেরকে গাছ কাটার কারন জানতে চাইলে উল্টো তারাই নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন। এমনকি ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেয়। এঘটনায় সাইদুর রহমান ছাড়াও তার ছেলে মো. বাবু (২৩) ও স্ত্রী আমেনা খাতুনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, গাছগুলো যে বা যারাই কেটে থাকুক, রাতের অন্ধকারে এমন গর্হিত কাজ মেনে নেয়ার মতো নয়। কারো সাথে যেকোন বিষয় নিয়ে ঝামেলা হতেই পারে। দেশে আইন-আদালত আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই বলে ফলসহ গাছ কাটার বিষয়টি খুবই ন্যাক্কারজনক। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়।
গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু মুঠোফোনে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এমন ঘটনা স্যতিই দুঃখজনক। রাতের অন্ধকারে লিচু গাছ কেটে ফেলার পর ভুক্তভোগী ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিলেন। ঘটনা শোনার পর তাকে ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ করতে বলেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বসে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাইদুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তকাজ চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
🔳বিশেষ প্রতিবেদন, আবদুল ওয়াহাব /২০২২।
© All rights reserved © 2021 Chapai Sangbad