চাঁপাই সংবাদ ডেস্ক রিপোর্ট :
ঈদের পর লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের এমপি আব্দুল ওদুদ।
খায়রুল আলম জেম’র জানাযা শেষে বেলা ৩ টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ঝিলিম রোডে সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, খাইরুল আলম হত্যার ঘটনায় যদি দ্রুত মামলা গ্রহণ করে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে ঈদের পরদিন থেকে লাগাতর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন তাঁরা। প্রয়োজনে রাস্তাঘাট অবরোধ, ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিস, এসপি (পুলিশ সুপার) অফিস, থানা ঘেরাও করা হবে। হরতাল পালন করা হবে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ বলেন, খাইরুল আলম কয়েক দিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ‘নুরুল ডিআইজি (ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম) তাঁর বাবার মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এ কথাটিই তাঁর বড় অপরাধ ধরে এ অপরাধকে মুছে দিতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবদুল ওদুদ বলেন, ‘ডিআইজি নুরুল ইসলামের অত্যাচারের কারণে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার মর্দানা গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ বাড়িতে থাকতে পারছে না। আমরা এর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ কামনা করি।’
খাইরুল হত্যাকাণ্ডে দুজনকে আটকের বিষয়ে আবদুল ওদুদ বলেন, এটা জজমিয়া খেলা হচ্ছে। তাঁরা টোকাই-মোকাই ধরে, স্বীকারোক্তি নিয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে জানাতে চান।
সংসদ সদস্য ওদুদের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যম কে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে বা কে কি করেছে, এ সকল নিয়ে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এই হত্যাকাণ্ড বা হত্যাকাণ্ডের পূর্বের বিষয়ে অথবা আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা কোনো ঘটনার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি কোনোটারই রিঅ্যাকশন ও রিপার্কেশন কোনোটাই করি নাই।’
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, চাক্ষুষ সকলে দেখেছে। এখন এটার পেছনে, পশ্চাতে কে আছে, কে কী করেছে, না করেছে, এটা কিন্তু তিনি বলে দিতে পারেন না। তাৎক্ষণিকভাবে যদি বলেই দেন, তাহলে ইনভেস্টিগেশনের প্রয়োজনটা কী? মাননীয় সংসদ সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে, তিনি একজন আইনপ্রণেতা, তিনি যদি এইভাবে কথাবার্তা বলেন, তাহলে এটা নিয়ে তো আমাদের প্রচণ্ড দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না। নাগরিক হিসেবে যদি আমার পূর্ণ মাত্রায় স্বাধীনতা থাকত, তাহলে আমার বিরুদ্ধে এ রকম সরাসরি আঙুল তোলা বা প্রেস কনফারেন্স করা, মিডিয়ার সামনে কথা বলার তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করতাম।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যাঁরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁরা ‘টোকাই’ শ্রেণিরই। এখন তাঁরা গ্রেপ্তার হলে জানা যাবে, তাঁদের পেছনে কোন রাঘববোয়ালরা আছেন। তবে মামলা এখনও হয় নি।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জড়িত আছেন, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা তা বলতে চাচ্ছি না।’