কপোত নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর নিচে ঈদুল ফিতরের পরদিন গত ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয় এক কিশোর। এরপর থেকেই সদর উপজেলার বারোঘরিয়া দৃষ্টিনর্দন পার্কের আশেপাশের ভ্রাম্যমাণ বাজার বন্ধ করে প্রশাসন। এই হত্যাকান্ডের পর দের মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দৃষ্টিনর্দন পার্কের আশেপাশের ভ্রাম্যমাণ বাজার।
প্রশাসনের এমন উদ্যোগের ফলে পথে বসেছে সেখানে থাকা প্রায় ৭০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এই ভ্রাম্যমাণ বাজারে থাকা দোকানপাট মালিকরা বাজার উন্মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে। মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকেলে সদর উপজেলার বারঘরিয়া ব্রীজ চত্বরে ক্ষুদ্র ও অসহায় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা এই মানববন্ধন করেন।
এ ছাড়াও সকল ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরিত পত্র বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছেন।
এদিকে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সেতুর পূর্ব প্রান্তে অনাকাঙ্খিত হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়। কিন্তু এই ঘটনার সূত্র ধরে সেতুর উভয় পাশে ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। এর ফলে বাজারের ৭০ জনের অধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসহায় ও নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। জীবন যাপনের একমাত্র উপায় হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তারা। জীবিকা নির্বাহের উপায় হারিয়ে মানসিকভাবে তারা বিপর্যস্ত এবং পরিবারে নেমে এসেছে অশান্তি, অভাব অনটন ও কিস্তির যন্ত্রনা আর কোনভাবেই থামছেনা তাদের এভাবেই চলতে থাকলে মরা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবোনা উপহার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, জীবিকা নির্বাহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আমরা অসহায় ও নিরুপায় দিনযাপনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। দৈনিক সবজি বাজারসহ বর্তমানে আমের মৌসুমকে কেন্দ্র করে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তারা বর্তমানে চোখে অন্ধকার দেখছে। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বারঘরিয়া বাজারে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিলে আমরা আর্থিক ও মানসিক ভাবে উপকৃত হয়ে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করে পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারব।
ভ্রাম্যমাণ বাজারের ইজারাদার সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি চলতি বছরের গত ১৪ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা হতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি। কিন্তু গত দেড় মাস যাবত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই বাজারে বসতে না পারার কারনে কোন খাজনা পাচ্ছি না। এতে আমি কিস্তি তুলে বিপাকে পড়ে গেছি দিনরাত কিস্তির মাষ্টার বাড়িতে হানা ফোনের পর ফোন বহু যন্ত্রণায় জীবন যাপন করছি। তাই বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিকট বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে ব্যবসা করে বাঁচতে দিন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রওশন আলী জানান, এবিষয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিয়েই সিধান্ত নেয়া হবে দ্রুত।
উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল দুই কিশোর গ্যাংয়ের মারামারির সময় ছুরিকাঘাতে নিহত হয় নবম শ্রেণির এক ছাত্র। নিহত কিশোর ফুলকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ও জেলা শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার মনিরুল ইসলামের ছেলে মো.ফাহাদ (১৬)। এই ঘটনাটাকে কেন্দ্র করে আজ পথে বসেছে ১০০ উপর ওই জায়গার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
© All rights reserved © 2021 Chapai Sangbad